বাচ্চার কান্না সামাল দিতে রোজ রোজ আপনাকে নতুন নতুন কাজ করতে হয়, কিন্তু বোধ হয় আপনার শিশুটি মন খুলে খেলাধুলো করতে পারছে না তার ফলেই চাপা বিরক্তি। এই বিরক্তির ফলে বাচ্চা শুধু খিটখিটে হয়ে উঠবে। এখানে এমন কিছু খেলা আর অ্যাক্টিভিটি আছে যা বাচ্চাদের আনন্দে আর ফুর্তিতে রাখবে!
০ থেকে ৩ মাস বয়স বয়স পর্যন্ত
এই বয়সের শিশুরা দিনের প্রায় বেশির ভাগ সময়ই ঘুমিয়ে থাকে। যখন জেগে ওঠে, তখন ওদের সঙ্গে বিভিন্ন ভাবে খেলা যেতেই পারে।
১। গানের ছন্দে দোলানো

এই সময় শিশুদের কোলে দুলিয়ে গান শোনালে ওরা আরও সজাগ হয়ে উঠবে। বাচ্চাকে দোলানের সময় খেয়াল রাখবেন যাতে বাচ্চার ঘাড়ের নিচে আপনার হাত থাকে। কিছুদিনের মাথায় আপনার বাচ্চা নাম ধরেও গেয়ে উঠতে পারে।
২। পায়ের মাংসপেশি মজবুত

স্নানের পর বা ডাইপার বদলের পর যখন বাচ্চা চিত হয়ে শুয়ে থাকবে, তখন আপনার বাচ্চার পা যত্ন করে ঘোরাতে থাকুন আর গাইতে থাকুন। গান আর বাচ্চার পা’দুটো সুরে সুরে ঘুরিয়ে যান, বার বার দিক পরিবর্তন করতে থাকুন। এ’তে আপনার শিশুর পায়ের মাংসপেশি মজবুত হবে আর ও আপনার সুর চিনতে শুরু করবে।
৩। ঝুনঝুনির শব্দ

ঝুনঝুনির শব্দ শুনিয়ে খেলুন আপনার বাচ্চার সঙ্গে, এ’তে ওর শ্রবণশক্তি দ্রুত বিকশিত হবে। ব্যাপারটাকে খেলার মত মজাদার করে তুলুন। একবার ওর ডান কানের কাছে ঝুনঝুনিটা নিয়ে গিয়ে বাজান, কখনও বাঁ কানের কাছে আর কখনও বা মাথার ওপর, উপভোগ করতে দিন।
৩ থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত
এই বয়সটা বেশ মজাদার। এখন আর বাচ্চারা গোটাদিন ঘুমিয়ে থাকে না। এই সময় ওর হাসি আর আদুরে ছটফটে গোটা বাড়ি আলোময় হয়ে ওঠে।
৪। পুতুল খেলা

ছোট ছোট স্টাফড টয় ব্যবহার করে আর গান গেয়ে বাচ্চার সঙ্গে খেলায় মেতে উঠতে পারেন। বিভিন্ন জন্তুজানোয়ারের স্টাফড টয়ের সঙ্গে তাদের শব্দে ডেকে উঠতে ভুলবেন না, সামান্য নেচে উঠলেও ক্ষতি নেই।
৫। কথা বলা

এই বয়সের বাচ্চাদের মুখে দিয়ে বেরোনো যে কোন শব্দই শুনতে অপূর্ব লাগে। এলোমেলো শব্দগুলোর আদলে আপনিও ওর সঙ্গে এলোমেলো শব্দে কথা বলুন, ওকে উৎসাহ দিন। পারলে এগুলো রেকর্ড করে রাখুন কারণ স্মৃতি হিসেবে এই মুহূর্তগুলো অমূল্য।
৬। হাতের কারুকার্য

হাতটাকে শিশুর মুখের সামনে ধরে আঙুলগুলোকে বিভিন্ন ভাবে নাড়ুন, হাত ঘুরিয়ে নাচিয়ে বিভিন্ন ভাব ভঙ্গী করুন। হাতের ছায়া দেওয়ালে ফেলে বিভিন্ন আকৃতি বানিয়ে বাচ্চাকে দেখান, এতেও সে খুব মজা পাবে।
৬ থেকে ৯ মাস বয়স পর্যন্ত
ছয় থেক নয় মাস বয়সে শিশুরা কাছের মানুষদের চিনতে শুরু করে। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে থাকতেই তখন সে বেশি পছন্দ করে। নিজের বাড়ির পরিবেশ সে বাড়তি স্বচ্ছন্দ বোধ করে। এই বয়সের বাচ্চারা অনেক বেশি ছটফটে আর তারা খেলাধুলো বেশ পছন্দ করবেই।
৭। আনন্দ দেওয়া

এই সময়ে বাচ্চারা বসতে শিখে যায়। বসে থাকার সময় ওদের হাত তুলে নাচ করতে পারেন, এগুলো বাচ্চাদের খুব ভালো লাগবে। এমনকি ঘাড় মাথা নেড়ে এবং নানারকম শব্দ করে সে দিব্যি জানান দিতে পারবে যে সে কতটা উপভোগ করছে খেলাটা।
৮। রকম ফের

আট মাস বয়স থেকে শিশুদের অবজেক্ট পার্মানেন্স বুঝতে পারে। অবজেক্ট পার্মানেন্স অর্থাৎ এ’টা বুঝতে পারা যে যা কিছু নজরের বাইরে আছে; তারও অস্তিত্ব থাকতে পারে। কাজেই এই সময় লুকোচুরি খেলাগুলো শিশুদের বেশ ভালো লাগবে। ওর চোখের সামনেই ওর প্রিয় খেলনা কম্বল বা বালিশের তলায় লুকিয়ে ফেলুন আর তারপর ওকে খুঁজে বের করতে দিন।
৯। নৌকা বাওয়ার

বাচ্চারা বসতে শিখে গেলে এই খেলাটা জমবে ভালো। বাচ্চাকে মুখোমুখি বসিয়ে ওর দুপাশে নিজের পা মেলে দিয়ে ওর দুহাত ধরুন। তারপর সামান্য ঝুঁকে কল্পনার নৌকা বাইতে শুরু করে দিন। এতে ও বেশ মজা পাবে আর ওর পিঠের পেশিও মজবুত হবে।
৯ থেকে ১২ মাস বয়স পর্যন্ত
১০। হামা দেওয়া

এই বয়সে হামাগুড়ি দেওয়া শিশুর সঙ্গেও লুকোচুরি খেলাই যায়। চেয়ারের আড়ালে বা খাটের অন্য প্রান্তে গিয়ে বসুন আর আপনার বাচ্চাকে হামা দিয়ে এগিয়ে আসতে দিন আপনার দিকে। কাছে এলেই ওকে জাপটে ধরে চমকে দিন।
১১। বল গড়িয়ে দেওয়া

যে কোনও বয়সের শিশুর জন্যেই বল খুবই ভালো খেলনা। বাচ্চাকে মেঝেতে বসিয়ে ওর দিকে বল গড়িয়ে দিন। ওকে বল ধরতে দিন, ছুঁড়ে ফেলতে দিন, ঠেলে দিতে দিন। বল খেলার নেশা একবার পেয়ে বসলে ও বারবার খেলতে চাইবে।
১২। বাস্কেটবল

পরিষ্কার মোজাকে দলা পাকিয়ে বলে বলের মত করে লন্ড্রি বাস্কেটে ছুঁড়ে ফেলুন, বাচ্চাকে সে’টা দেখিয়ে ছুঁড়ে ফেলতে শেখান। বিশেষত শিশুরা যখন সবে হাঁটতে শিখছে, তখন এই খেলাটা ওর জন্য আদর্শ। বাচ্চা যদি হাঁটতে নাও শিখে থাকে, আপনি ওকে ধরে দাঁড় করিয়ে এ’টা খেলাতে পারেন।
