বাচ্চাদের কি দুধ সত্যিই ফুটিয়ে খাওয়ানো ভাল নাকি কাঁচা দুধ খাওয়ানো ভাল?
ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, বাড়িতে দুধ এলেই তড়িঘড়ি মা-ঠাকুমারা সেটাকে ফোটাতে শুরু করতেন। কাঁচা দুধ সাধারণত দেওয়া হয়না বাচ্চাদের। তখন দুধ আসত সরাসরি গোয়াল থেকে। অনেকে বলতেন, দুধ দোয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কাঁচা অবস্থায় খেয়ে ফেলাতেই নাকি উপকার সবচেয়ে বেশি। তখন ছিল হরিণঘাটার বোতলের দুধও। বর্তমানে প্যাকেট দুধের বাড়বাড়ন্ত। কিন্তু চিকিত্সক বা ডায়েটিশিয়ানরা এ নিয়ে কী বলছেন?
এখন আমরা যে প্যাকেটের দুধ কিনি, তা পাস্তুরাইজড। পানীয় জীবাণুমুক্ত এবং সংরক্ষণের পদ্ধতির নাম পাস্তুরাইজেশন। বিশেষ পদ্ধতিতে উচ্চ তাপমাত্রায় পাস্তরাইজেশন করা হয়। অনেকে বলেন, পাস্তরাইজেশন পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্ত করে বাজারে আসছে যে দুধ, তা ফোটানোর কোনও দরকার নেই। এতে দুধের খাদ্যগুণ নষ্ট হওয়া ছাড়া কিছুই হবে না। সত্যিই কি তাই?
সরাসরি গোয়াল থেকে আসা কাঁচা দুধ বাচ্চাদের না ফুটিয়ে খাওয়াতে কঠোর ভাবেই নিষেধ করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে সংক্রমণের সম্ভাবনা যথেষ্ট বেশি। ফলে এই দুধ অবশ্যই ফুটিয়ে খান। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা দুধে অনেকরকম রোগজীবাণু বাসা বাঁধে। সরাসরি ডেয়ারি থেকে আনা দুধ খেলে সেই জীবাণু বাচ্চাদের শরীরের নানা ক্ষতি করতে পারে। দুধ ফোটালে উচ্চ তাপমাত্রায় সেই সব জীবাণু মরে যায়।
প্যাকেটের দুধও ফুটিয়ে খাওয়াই ভাল, এমনটাও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ পাস্তরাইজেশন পদ্ধতিতে দুধ একশো শতাংশ ব্যাকটিরিয়া মুক্ত করা সম্ভব হয় না।
নিউ ইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববদ্যালয়ের ফুড সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপকদের কথায়, না ফোটানো দুধে ই-কোলাই, সালমোনেল্লার মতো ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়া বাসা বাঁধে। এই ব্যাকটিরিয়া শিশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমিয়ে দেয়। শুধু বাচ্চা নয়, গর্ভবতী মহিলা এবং বয়স্কদেরও সব সময় দুধ ফুটিয়ে খেতে বলেন চিকিৎসকেরা।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি-র বিশেষজ্ঞেরা ‘পাবমেড’-এ একটি সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। সেখানে দেখা গিয়েছে কাঁচা দুধ তো বটেই, এমনকী পাস্তরাইজড দুধেও নানা রকম মাইক্রোব্যাকটিরিয়া জন্মায়। তাদের মধ্যে রয়েছে, সিউডোমোনাস (৬৪-৫৩.৮ শতাংশ), মাইক্রোকক্কাস (৮.২ শতাংশ), এনটারোব্যাকটর (৯.৮ থেকে ২.৬ শতাংশ), ব্যাসিলাস (৬.৬ থেকে ২.৬ শতাংশ), ফ্ল্যাভোব্যাকটর (১.৬ থেকে ১.৩ শতাংশ)।
পাস্তরাইজেশন পদ্ধতিতে দুধ জীবানুমুক্ত করতে গিয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় ফোটানো হয়, ফলে দুধের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। তাই বর্তমানে, এই পদ্ধতিতে দুধ একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ফোটানো হয় এবং ধীরে ধীরে সেটাকে ঠান্ডা হতে দেওয়া হয়। তাই গবেষকদের মত, প্যাকেট দুধ দোকান থেকে কিনে এনে কিছু সময় হলেও সেটাকে ফোটান। যদি কোনও জীবাণু থেকেও থাকে, ফোটালে সেই সম্ভাবনা দূর হবে।
দুধ বারে বারেই ফোটাতে পারেন। এতে দুধের পুষ্টিগুণের কোনও ক্ষতি হয় না। বরং শিশুদের উপকারই হয়।
