বাচ্চা স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে সাইকেল কিনবেন? তাহলে এগুই মাথায় রাখুন
আজকের দিনের ব্যস্ত রাস্তায় দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌছানোর একটি চমৎকার মাধ্যম হল সাইকেল। তাই প্রত্যেকটি বাবা মা শিশুকে হাঁটা শেখানোর বয়স পার হয়ে গেলে প্রথম যেই জজিনিসটি সেখান সেটি হল সাইকেল। এটি শিখলে ভবিষ্যতে যে শুধু তাকে দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌছে দেবে তাই নয়, নিয়মিত সাইক্লিং শিশুর শরীরকে রাখবে সুস্থ। শরীরের মেদ জমতে দেবে না এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যায়ও পড়তে দেবে না। কিন্ত শিশুকে সাইকেল নিয়ে নেমে পড়ার আগে তো সাইকেল কিনতে হবে। কিন্ত সাইকেল সম্পর্কে কি ধারণা আছে? সমস্যা নেই। দেখে নিন শিশুর সাইকেল কেনার সময় কি কি বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
১। বাজেট
প্রথমেই ঠিক করে ফেলুন আপনার বাজেট কত। কারণ আপনি শিশুর জন্যে কি ধরণের সাইকেল কিনবেন তা নির্ভর করবে আপনার বাজেটের উপর।
২। সিঙ্গেল-গিয়ার নাকি মাল্টি-গিয়ার
এরপরই ঠিক করে ফেলুন আপনি বছর জন্যে মাল্টি-গিয়ার সাইকেল কিনবেন নাকি সিঙ্গেল-গিয়ার। আপনার বাজেট যদি হয় ৫০০০-৮০০০ এর মধ্যে তাহলে সিঙ্গেল গিয়ার সাইকেল কেনাই ভাল। এই দামের মধ্যে মেঘনা, প্রিন্স ব্র্যান্ডের ভাল কিছু সাইকেল পাবেন। আর যদি বাজেট হয় ৮০০০ এর বেশী তাহলে কিনতে পারেন মাল্টি-গিয়ার সাইকেল। ভাল মানের বিদেশী ব্র্যান্ডের মাল্টি-গিয়ার সাইকেলের দাম শুরু ১০০০০ টাকা থেকে। বাজেট যদি হয় ১০০০০ এর বেশী তাহলে কিনতে পারেন ফোনিক্স, র্যালে, হিরো কিংবা ফক্সটারের মতন নামকরা বিদেশী ব্র্যান্ডের সাইকেল।
৩। গিয়ার মুভমেন্ট
সাইকেল কেনার সময় খেয়াল করুন গিয়ার মুভমেন্ট কেমন। অর্থাৎ এক গিয়ার থেকে আরেক গিয়ারে সহজে শিফট করা যায় কিনা। গিয়ার মুভমেন্ট মসৃণ না হলে সেই সাইকেল কখনোই কিনবেন না। গিয়ার কন্ট্রোলিং এর ক্ষেত্রে দু ধরণের সাইকেল আছে। এক ধরণের গিয়ার হাতে ঘুরিয়ে কন্ট্রোল করা হয়। আরেক ধরণের গিয়ার বাটন টিপে কন্ট্রোল করা হয়। বাটন গিয়ারের দাম তুলনামূলকভাবে বেশী হলেও এটিই সাচ্ছন্দ্যময়।
৪। ফ্রেম
এরপর যে বিষয়টি খেয়াল করবেন তা হল সাইকেলের ফ্রেম। সাইকেলের ফ্রেম তিন ধরণের হয়ে থাকে।
আয়রন ফ্রেম- এই ধরণের ফ্রেম লোহা দিয়ে তৈরী হয়। এই ফ্রেমে তৈরী সাইকেল ওজনে বেশ ভারী হয়।
এলয় ফ্রেম- এধরণের ফ্রেম এলুমিনিয়ামের তৈরী হয়। এলয় ফ্রেমে তৈরী সাইকেল ওজনে বেশ হালকা হয়।
কার্বন ফ্রেম- কার্বন ফাইবারে তৈরী এই ফ্রেম ওজনে সবচেয়ে হালকা হয়। রেসিং সাইকেলে এই ধরণের ফ্রেম ব্যবহার করা হয়। এই ফ্রেমের তৈরী সাইকেল একটু দুষ্প্রাপ্য এবং দামও অনেক।
ওজনে হালকা হওয়ায় এলয় ফ্রেমে তৈরী সাইকেলের চাহিদাই বেশী। এলয় সাইকেল শিশুর পক্ষে বহন করাও সুবিধা। সহজেই কাধে নিয়ে দোতলা বা তিনতলায় উঠতে পারবেন আপনিও। আপনার বাড়ি যদি হয় দোতলা বা তার উপরে তাহলে আয়রন ফ্রেম সাইকেল কেনা থেকে বিরত থাকুন।
৫। ডুয়াল সাসপেনশন
সাইকেলে যদি ডুয়াল সাসপেনশন থাকে তাহলে সেটি না কেনাই ভাল।
৬। ব্রেক
খেয়াল করুন ব্রেকটি কি ধরণের। সেটি কি ভি (V ) ব্রেক নাকি ডিস্ক ব্রেক? ভি ব্রেক এর দাম তুলনামূলকভাবে কম। কার্যকারিতাও কম। ডিস্ক ব্রেকের দাম তুলনামূলকভাবে বেশী। এর কার্যকারিতাও বেশী। শিশুকে অবশ্যই ডিস্ক ব্রেকযুক্ত সাইকেল কিনে দেবেন।
৭। সিট
খেয়াল করুন সাইকেলের সিটটি আরামদায়ক কিনা। সিটটি যদি অতিরিক্ত শক্ত হয় তাহলে কিছু সময় সাইকেল চালালেই বাচ্চার পিছনের অংশ ব্যাথা হয়ে যাবে। এর ফলে সে লম্বা সময় সাইক্লিং এর আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবে।
৮। টায়ার
খেয়াল করুন টায়ারের অবস্থা। ব্রেক করলে কি এটি স্কিড করবে? যদি স্কিড করে তাহলে সেটি না কেনাই ভাল। টায়ারের অবস্থা দেখা খুব বেশী জরুরী যদি আপনি শিশুর জন্যে সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল কেনেন।
১০। চেইন
খেয়াল করুন প্যাডল করলে সাইকেলের চেইন স্কিড করছে কিনা। যদি করে তাহলে ঐ সাইকেলটি কেনা থেকে বিরত থাকুন।
১১। ব্যবহার
সাইকেল কিনুন সাইকেল কেনার পর আপনি কিভাবে এটি ব্যবহার করবেন সেটি মাথায় রেখে। আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় বাচ্চাকে সাইকেলে চড়ে স্কুলে যেতে দেওয়া বা শুধু ঘুরে বেড়ানো, তাহলে রেসিং সাইকেল কেনা অর্থহীন। বিশেষ করে প্রথমেই শেখার সময় ভুলেও রেসিং সাইকেল কিনবেন না।
১২। উপদেশ
বাচ্চার সাইকেল কেনার সময় সাইকেল সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখেন এরকম কাউকে সাথে নিয়ে যাবেন।
১৩। হেলমেট
সাইকেল চালানোর সময় শিশুকে অবশ্যই হেলমেট পড়াবেন। হেলমেটের দাম শুরু ৬০০ টাকা থেকে।
১৪। রাস্তা
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা, ব্যস্ত রাস্তায় কখনোই শিশুকে সাইকেল শেখাবেন না প্রথমে।
তাহলে আর কি? সাইকেল কিনে শিশুকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ুন রাস্তায়। হ্যাপি সাইক্লিং।
